আমি জানি হারানোর বেদনা খুবই কষ্টকর: শেখ হাসিনা

জিবি নিউজ 24 ডেস্ক //

দেশের মানুষের জন্য রক্ত দিয়ে  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের রক্তের ঋণে আবদ্ধ করে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমি সব হারিয়েছি। আমি জানি হারানোর বেদনা খুব কষ্টকর। সেই কষ্ট সহ্য করে একটা লক্ষ্য নিয়েই কাজ করে যাচ্ছি। সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করাই আমার লক্ষ্য। আমাদের একটাই লক্ষ্য, তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) এই রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে।’

 

জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) প্রচারিত  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি নিবেদিত ‘শোক থেকে শক্তি, শোক থেকে জাগরণ’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘তিনি (বঙ্গবন্ধু) এ দেশের মানুষের জন্য রক্ত দিয়ে গেছেন। রক্তের ঋণে আমাদের আবদ্ধ করে গেছেন। আমাদের একটাই লক্ষ্য—তাঁর এই রক্তের ঋণ আমাদের শোধ করতে হবে। বাংলাদেশকে পিতার ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আর সেই প্রতিজ্ঞা নিয়ে, সেই আদর্শ নিয়েই আমাদের পথচলা।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আজকে সারা বিশ্বের কাছে উন্নয়নের বিস্ময়। জাতির পিতার এই আত্মত্যাগ কখনও বৃথা যেতে পারে না।’

১৫ আগস্ট ঘাতকদের হাতে স্বজন হারানোর বেদনার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই দিনটি (১৫ আগস্ট) আমাদের জন্য শোকের দিন, কষ্টের দিন। কিন্তু সব থেকে বড় কথা হলো—বাঙালি জাতির জন্য সব হারানোর দিন, শোকের দিন।’

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ এই বাংলাদেশকে পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা, দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নত, সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে আমরা গড়ে তুলবো। যে দেশের স্বপ্ন আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেখেছিলেন, সেই স্বপ্ন ইনশাআল্লাহ বাস্তবায়িত হবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে বাংলাদেশকে  পিতা স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন, আজকে সেই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। মাথাপিছু আয় ২ হাজার ২২৭ ডলারে উন্নীত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজকে বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে, দারিদ্র্যের হার আমরা হ্রাস করতে সক্ষম হয়েছি। যেখানে ৪৫ ভাগ ছিল সেখানে আমরা ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছরে উন্নীত হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে—এ দেশে একটি মানুষও দারিদ্র্যের কষাঘাতে জর্জরিত থাকবে না। একটি মানুষও ভূমিহীন থাকবে না। জাতির পিতা গুচ্ছগ্রাম নির্মাণের মাধ্যমে ভূমিহীন মানুষের জন্য খাস জমি বিতরণ করে ঘর তৈরি করে দেওয়ার কর্মসূচি নিয়েছিলেন। আমরা তাঁর জন্মশতবার্ষিকীতে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহারা থাকবে না। আমরা সেভাবে গৃহনির্মাণ করে দিচ্ছি ঘরহারা মানুষদের। চিকিৎসা সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিয়েছি। শিক্ষার আলো আজকে ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে। প্রায় ৭৪ ভাগ মানুষ এখন সাক্ষরতা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে তিনি (বঙ্গবন্ধু) যে কর্মসূচি হাতে নিয়েছিলেন, সেটা যদি বাস্তবায়ন করে যেতে পারতেন, তাহলে বাংলার মানুষ তার গণতান্ত্রিক অধিকার, অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারতো। ক্ষুধা দারিদ্র্য থেকে উন্নত জীবন পেতে পারতো। কিন্তু ঘাতকের দল সেটা হতে দেয়নি। যারা স্বাধীনতা চায়নি, যারা বাঙালির বিজয় চায়নি, তারাই নির্মমভাবে তাঁকে হত্যা করে এবং কিছু লোক তো বেইমানিও করে, মুনাফেকি করে। এটাই হচ্ছে আমাদের জন্য সব থেকে দুর্ভাগ্যের।’

১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঘাতকরা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি  রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। সে সময় সৌভাগ্যক্রমে দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।

পিতার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন নেছা মুজিব, তিন ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, বঙ্গবন্ধুর সহোদর শেখ আবু নাসের, কৃষক নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, যুবনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মণি ও তাঁর অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বেবী সেরনিয়াবাত, আরিফ সেরনিয়াবাত, সাংবাদিক শহিদ সেরনিয়াবাত, সুকান্ত বাবু, আব্দুল নঈম খান রিন্টুসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে হত্যা করে ঘাতকরা।

রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল, কর্তব্যরত পুলিশের বিশেষ শাখার এএসআই সিদ্দিকুর রহমান, সেনা সদস্য সৈয়দ মাহবুবুল হকও এদিন নিহত হন। ঘাতকদের কামানের গোলার আঘাতে মোহাম্মদপুরে একটি পরিবারের বেশ কয়েকজন হতাহত হন।

আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ।

বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রচারিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন তারানা হালিম।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন