মিজানুর রহমান মিজান
সমস্ত প্রশংসা, গুণগান, শান-শওকত সেই মহান রবের, যিনি এতো সুন্দর ও সুশৃংখল করে এ মহাবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেকটি জীবকে যথানিয়মে প্রতিপালন করছেন। সেই সাথে হাজারও দুরুদ ও সালাম জানাই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ট মহামানব, মানবতার মুক্তির দূত রাসুলে করীম হযরত মুহাম্মদ (স:)এর শানে।
বাংলাদেশের বৃহত্তর সিলেটকে বলা হয়ে থাকে আধ্যাত্মিক রাজধানী অনেক অলি-আউলিয়ার পদধুলি স্পর্শিত মাটি বলে।শিক্ষা, জ্ঞান-গরিমায় সিলেটের ঐতিহ্য সুপ্রাচীন ও সমুজ্জল।সেই সুদুর অতীতে যখন নবদ্বীপ ছিল এ অঞ্চলের জ্ঞানপীঠ, তখনও সিলেটের পন্ডিতমন্ডলী নবদ্বীপে তাঁদের পান্ডিত্যের মহিমায় ছিলেন সমুজ্জ্বল।বর্তমান অবস্থা যাই থাকুক না কেন অতীত গৌরব সুপ্রাচীন কালের সহিত সম্পৃক্ত রয়েছে বলে মনে হয়।জানা যায়, নবাব আলীবর্দী খানের গৃহ শিক্ষক ছিলেন এই সিলেটের অধিবাসী।(তথ্যসুত্র: আছদ্দর আলী রচনা সমগ্র পৃষ্টা ৫৪১)সেক্ষেত্রে আসাদ্দর আলী রচনা সমগ্র গ্রন্থের ৫৩৯ পৃষ্টায় জনাব আসাদ্দর আলীর একটি প্যারা এখানে উদ্ধৃত করা প্রয়োজন।“শিক্ষাঙ্গনসহ প্রতিভাধর ব্যক্তিত্বশালীদের ক্ষেত্রে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সৃষ্টিতে বাংলাদেশের মধ্যে সিলেট বিভাগ অতীতে একটি সম্মানজনক আসনের অধিকারী হতে পেরেছিল।প্রাচীন যুগ, মধ্যযুগ এবং বিংশ শতাব্দীর বেশীর ভাগ সময় পর্য়ন্ত সম্মানজনক সে আসনটি বজায় ছিলো সিলেট বিভাগের। পূর্ব পাকিস্তানের জন্মের পর ১৭টি জেলার মধ্যে দু’চারটা বাদে বাকি সব জেলার ডিপুটী কমিশনারগণ ছিলেন সিলেটের কৃতি সন্তান।শিলং সেক্রেটারিয়েট ঢাকায় আসার পর সেটা ছিল সিলেটবাসীদের খাস দখলে। এসব সত্য থেকে তখন পর্যন্ত শিক্ষাঙ্গনে সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার সৃষ্টিকারী সিলেট বিভাগের শীর্ষে অবস্থান সম্পর্কে অনুমান করা যাচ্ছে।পাকিস্তান আমলে এসে অতি দ্রুত বেশ কিছুটা পরিবর্তন সুচিত হতে দেখা যায়।পাউন্ড-ডলারের হাতছানিতে অনেক প্রতিভাশালী যুবক মাঝপথে শিক্ষা জীবনের ইতি ঘটিয়ে পাড়ি জমাতে শুরু করে পাশ্চাত্যের নানা দেশে। যার ফলে ধীরে ধীরে শূন্যতার অনুজ্জ্বল আভাস পরিলক্ষিত হতে থাকে সিলেট বিভাগের ঐতিহ্যশালী অত্যুজ্জ্বল শিক্ষাঙ্গনে।ক্রমশ: কমতে শুরু করে সিলেট বিভাগের লোকদের শিক্ষার হার।অতীতের তুলনায় সিলেট বিভাগের জন্যে এটাকে এক নির্মম করুণ ইতিহাস বলে গণ্য করা যেতে পারে”।কিন্তু বর্তমানে আবারও আমাদের ভবিষ্যত উজ্জ্বল হবার একটি লক্ষণ সুদৃষ্ট সম্ভাবনার আভাষ পরিলক্ষিত হচ্ছে।যেমন ২০০২ সালে বিশ্বনাথেরই এক কৃতি সন্তান বৃটেনের ইষ্ট লন্ডনের পপলার এলাকায় বসবাসরত মোহাম্মদ আয়াছ মিয়া চার্টার্ড একাউন্টেন্সী কৃতিত্বের সহিত পাশ করে পার্শ্ববর্তী স্টেপনী গ্রীণ এলাকায় এম একাউন্টেন্সী সার্ভিস প্রতিষ্ঠা করে বৃটেনে সুনাম কুড়াচ্ছেন।তিনির পরবর্তী উত্তরসুরী হিসাবে বিশ্বনাথেরই আরেক কৃতি সন্তান মোহাম্মদ আলী আসকর এসিএমএ চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ২০১৪ সালে পাশ করে আলো ছড়াচ্ছেন বৃটেনের মাটিতে।আজকের এ লেখা আমার তিনিকে নিয়েই।নিম্নে তা অবশ্যই আলোচনার আশা প্রত্যাশা নিয়ে কাগজের বুকে আঁচড় শুরু করছি।
নিজের অতীতকে স্মরণ করা ক্ষতিকর নয়। বরং উৎসাহ, উদ্দীপনা ও সাহস যোগায়। সামনের দিকে এগিয়ে যাবার পথ প্রশস্থ ও অন্তরে প্রশান্তি আসে।তাই অতীতকে স্মরণ করায় সহায়তার ক্ষেত্র তৈরীতে ভুমিকা রাখে।প্রখ্যাত ব্যক্তি সিসেরো বলেছেন, “যতই উর্বরা হোক একটা ক্ষেত যেমন কর্ষণ ছাড়া ফসল দিতে পারে না, শিক্ষা ছাড়া মানুষের অবস্তাও তেমনি”।আল-হাদিসের বাণীতে বলা হয়েছে, “শিক্ষা লাভ করা প্রতিটি মুসলমান নর-নারীর জন্য অবশ্য কর্তব্য”।আবার ফ্রান্সিসবেকন বলেছেন,“শিক্ষা সুন্দর আলো,সমুজ্জল ভবিষ্যত এবং আত্ম-বিশ্বাস দেয়”।সুতরাং শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব মানব জীবনে অপরিসীম।সর্বোপরি ডা: রাজিনিস এর ভাষায়,“শিক্ষা হচ্ছে যুবকের মাধুর্য,বৃদ্ধের শান্তনা, গরিবের ধন এবং ধনীর অলঙ্কার”।জন্মগত ভাবে সকল মানুষই এক।কিন্তু শিক্ষাই তাদেরকে ব্যাপক ভাবে আলাদা করে ফেলে।যাক এবার মনোনিবেশ করবো মুল প্রসঙ্গের দিকে।
বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়ন একটি ঐতিহ্যবাহী ইউনিয়ন।এ ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের জয়নগর (নোয়া পাড়া) একটি গ্রাম।যে গ্রামে জন্ম গ্রহণ করে আলোর আভায় উদ্ভাসিত করেছিলেন সময়ের শ্রেষ্ট আলেম মরহুম মাওলানা ইজ্জত উল্লাহ (র:),সিনিয়র রেঞ্জার মরহুম আব্দুর রহিম, মরহুম আব্দুর রাজ্জাক বি.এস.সি বি.টি,(সিলেট গভর্ণমেন্ট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক),মাস্টার মরহুম নাজিম উদ্দিন, এডভোকেট আব্দুর রসিদ লাল মিয়া ও প্রখ্যাত মরহুম বাউল চাঁন মিয়া প্রমুখ।এই জয়নগর গ্রামে ১৯৮২ সালের আগষ্টে পিতা মরহুম আব্দুল মছব্বির ও মাতা জাহানারা বেগম দম্পতির কোল আলোকিত করে জন্ম গ্রহণ করেন মোহাম্মদ আলী আসকর।তিনি ১৯৮৯ সালে জয়নগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়া শুরু করে ১৯৯৩ সালে পঞ্চম শ্রেণী পাশ করেন কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের মাধ্যমে।অত:পর ভর্তি হন স্থানীয় উত্তর বিশ্বনাথ উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে লেখাপড়া করেন ১৯৯৭ সাল পর্য়ন্ত।অবশেষে চলে যান সিলেট শহরের রসময় হাই স্কুলে। সেখান থেকে ২০০১ সালে পাশ করেন এস.এস.সি।শেষে উচ্চ মাধ্যমিক পড়ার লক্ষ্য নিয়ে ভর্তি হন মদন মোহন কলেজে।২০০৩ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেন উল্লেখিত কলেজ থেকে।
উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণের লক্ষে পাড়ি জমান ২০০৫ সালে মালেশিয়ার রাজধানী কুয়ালালাম পুরের একটি স্বনাম ধন্য ইউনিভার্সিটিতে।কিন্তু ২০০৭ সালে এক সপ্তাহের জন্য লন্ডন ভ্রমণ করেন এবং আমেরিকার ওহিওতে ছুটি কাটান।ছুটি কাটানোর পাশাপাশি ওহিওতে কাজও করেন।আমেরিকা থেকে লন্ডনে স্থানান্তরিত হয়ে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন ২০০৮ সালে লন্ডন থেকে বিজনেস ফিনান্স (অনার্স)।২০১৪ সালে লন্ডনের একটি ইউনিভার্সিটি থেকে চার্টার্ড ডিগ্রি অর্জন করেন।এ পর্য়ন্ত কাজের যে সকল অভিজ্ঞতা অর্জিত হয়েছে তার সংক্ষিপ্ত আলোকপাত করছি।সিনিয়র ফাইনান্স ম্যানেজার, ডিপার্টমেন্ট ফর ডিজিটেল কালচার এন্ড স্পোর্ট (২০১৭-২০১৮)।কমনওয়েলথ গেমস বারমিংহাম ২০২২ সালের ১১,৫০০ কোটি টাকার অর্থ মন্ত্রণালযের অনুমোদন পেতে মুখ্য ভুমিকা পালন করেন।তিনির চার্টার্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট চলাকালীন সময়ে একটি এনজিও প্রতিষ্ঠানে কাজ করছিলেন ২০১৫ সালে।অত:পর তিনি সরকারি খাতে চলে আসেন এবং যুক্তরাজ্যের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে যোগ দেন।যুক্তরাজ্যের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে থাকাকালীন সময়ে ৮০০০ কোটি টাকার বাজেট অত্যন্ত দক্ষতার সহিত পরিচালনা করেন।২০১৮ সালে তিনি সিভিল সার্ভিস ছেড়ে বেসরকারি খাতে সিনিয়র ফাইন্যান্স বিজনেস পার্টনার হিসাবে যোগদান করে দায়িত্ব পালন করছেন।
মোহাম্মদ আলী আসকর ২০১০ সালে বিবাহ করেন ব্যাংকার হালেমা খানম আসকরকে।এ দম্পতির বর্তমানে এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।মোহাম্মদ আলী আসকরের ছোট এক ভাই আব্দুল লতিফ ফরহাদ লন্ডনের স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করে বর্তমানে ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট এ সুনামের সহিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।সঙ্গত কারনে এখানে উল্লেখ করতেই হয় মোহাম্মদ আলী আসকরের চাচা ছিলেন চট্রগ্রাম বিভাগের সিনিয়র রেঞ্জার মরহুম আব্দুর রহিম।
বিশ্বনাথ উপজেলার খাজাঞ্চী ইউনিয়নের গর্বিত সন্তান মোহাম্মদ আলী আসকর থাইল্যান্ড,মাল্টা,ফ্রান্স,মরক্কো,পর্তুগাল, স্পেন,লিসবন ইত্যাদি দেশ ভ্রমণ করেছেন বিভিন্ন সময়ে।আমরা মোহাম্মদ আলী আসকরের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে সতত দোয়া করি মহান আল্লাহ যেন তিনিকে ও তার পরিবারস্থ সবাইকে সুস্থ, সুন্দর ও দীর্ঘ জীবন দান করেন।তিনি সুস্থ থেকে আমাদের জন্য নিয়ে আসুন আরো আরো আলোর পরশ মন্ডিত কাজক্রমের মাধ্যমে গৌরব,মর্যাদা ও সুনাম।
লেখক মিজানুর রহমান মিজান, সম্পাদক দীপ্তি, রাজাগঞ্জ বাজার , বিশ্বনাথ, সিলেট।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন