চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপত্যের অংশ পরির পাহাড়ের কোর্ট বিল্ডিং এর বিভিন্ন অংশে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা রয়েছে বলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ সম্প্রতি তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছেন। পরির পাহাড়ের সাবরেজিস্ট্রি অফিসের চারপাশে এবং জহুর হকার মার্কেটের দক্ষিণাংশে সেমিপাকা স্থাপনা রয়েছে। এগুলোয় বৈদ্যুতিক সংযোগ এবং কয়েকটিতে গ্যাস ও পানির সংযোগ আছে। এসব স্থাপনার জন্য সিডিএ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয়নি। অন্যদিকে অনুমোদনহীন স্থাপনায় বসবাসরত ব্যক্তিরা চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন থেকে ভাড়া/লিজ নিয়ে তারা দখলে আছেন এবং নিয়মিত জেলাপ্রশানকে ভাড়া দিচ্ছেন জানান। আইনজীবী ভবনের নকশা সিডিএ কর্তৃক অনুমোদিত হলেও কোনো ধরনের পরিকল্পনা ছাড়াই অনুমোদনবিহীন ও সম্পূর্ণ অবৈধভাবে বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা, রাস্তার ওপর যত্রতত্র পার্কিং, হকার্স, স্টেশনারি দোকান, খাবার হোটেল, কম্পিউটার দোকান, অস্থায়ী কাঁচাবাজার, শুঁটকি বাজার, ভ্রাম্যমাণ হকার বসার কারণে সৌন্দর্যকন্যা পরির পাহাড় বর্তমানে সৌন্দর্য হারিয়ে ইটপাথরের জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। কোট বিল্ডিং এর প্রবেশ পথেও দোকান, মটরসাইকেল পার্কিং এর কারনে আদালতের বিচারপ্রার্থী, অন্যান্য আগন্তুককে ঘন্টার পর ঘন্টা যানজটে পড়তে হয়। যার কারনে সাধারন মানুষ ও সরকারি-বেসরকারি আগন্তুক ও বিচারপ্রার্থীদের বিপুল কর্মঘন্টা নষ্ঠ হচ্ছে।
পরিবেশবিদ ও ভুমিকম্প বিশেষজ্ঞদের মতে এতে ভূমিকম্প, ভূমিধস বা অগ্নিকান্ডের মতো পরিস্থিতির উদ্ভব হলে মারাত্মক মানবিক বিপর্যয় হতে পারে বলে। এমতাবস্থায় তাই দেশের প্রচলিত আইন ও বিধিবিধান অমান্য করে পরির পাহাড় (কোর্ট হিল) এলাকায় পরিবেশবিধ্বংসী দখলবাজি, খাসজমিতে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ এবং স্থাপনা নির্মাণ আর একাজে কোনপ্রকার বাধা প্রদান না করায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও পরিবেশ অধিদপ্তরের দায়িত্বহীনতার পরিচয় প্রদান করেছেন বলে মন্তব্য করেছেন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম নগর ও বিভাগীয় নেতৃবৃন্দ।
রবিবার ১২ সেপ্টেম্বর সংবাদপত্রে পাঠানো এক বিবৃতিতে ক্যাব নেতৃবৃন্দ উপরোক্ত দাবি জানান। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ক্যাব কেন্দ্রিয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারন সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগরের সভাপতি জেসসিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু ও ক্যাব চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ্ব আবদুল মান্নান।
বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ অভিযোগ করে বলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ(সিডিএ) পরিকল্পিত নগরী প্রতিষ্ঠায় সরকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত হলেও তাদের মূল কাজ বাসা-বাড়ীর অনুমোদন, অনুমোদিত স্থাপনার যথাযথ বাস্তবায়ন, অনুমোনদবিহীন স্থাপনা উচ্ছেদ হলেও তারা বাসা-বাড়ীর অনুমোদনে সীমাহীন দীর্ঘসুত্রিতা, তাদের আওতা বর্হিভুত অন্য কাজে ব্যস্ত। ঠিক একইভাবে পরিবেশ-প্রতিবেশ সংরক্ষণে পাহাড় কাটা বন্ধ, পাহাড়ে বসতীস্থাপন বন্ধ, পরিবেশ দূষণরোধ, পলিথিন উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ বন্ধ, নদী, পুকুর খাল ভরাট বন্ধ পরিবেশ অধিদপ্তরের মূল কাজ হলেও তারা পোল্ট্রি খামার, গরুর খামারকে নোটিশ প্রদান করে যাচ্ছে। নগরীতে দিন দপুরে পাহাড় কাটা, অবৈধ স্থাপনা, পাহাড়ে বসতি বাড়লেও তাদের কোন উদ্যোগ নাই। এমনকি নগরীর বহুল আলোচিত রেলওয়ের সিআরবি পাহাড় কেটে বেসরকারী হাসপাতাল নির্মানেরর বিরুদ্ধে নগরবাসীর প্রচন্ড আন্দোলন হলেও পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন বক্তব্য নাই।
নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগগুলি যদি তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে অবেহলা করে, দায়িত্বপালনের নামে ভিন্ন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকে তাহলে সাধারণ জনগন আইন ও প্রশাসনের ওপর আস্থা হারাবে। তাই অবিলম্বে পরির পাহাড় (কোর্ট হিল) এলাকায় পরিবেশবিধ্বংসী ও অনুমোদনহীন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করে ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন স্থাপত্যের পরীরপাহাড় সংরক্ষনের দাবি জানান।
মন্তব্যসমূহ (০) কমেন্ট করতে ক্লিক করুন