মৌলভীবাজারে করোনা শনাক্তের হার কমছে : দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা মিলছেনা

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ॥  

সীমান্তবর্তী মৌলভীবাজার জেলায় করোনা শনাক্তের হার কমে এসেছে। গত একমাস পূর্বে করোনাভাইরাসের যে ভয়াবহ রূপ ছিল তা কমে নেমে এসেছে ৯ দশমিক ৯ শতাংশে। বেড়েছে টিকা দানে সাধারণ মানুষের আগ্রহ। প্রতিদিন দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা গ্রহন করছেন। আবার অনেকেই টিকা না পেয়ে বাড়ি ফিরছেন।
গতকাল সোমবার ১৩ সেপ্টেম্বর ভোর থেকে হাসপাতালের সামনে ছিলো লম্বা লাইন। তীব্র রোদ উপেক্ষা করেই ছিলো টিকা নিতে আসা মানুষের লম্বা লাইন। দীর্ঘ সময় রোদে দাঁড়ানোর পর কর্তৃপক্ষ তাদের জানালেন ‘টিকা নেই’। অসহনীয় গরমে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকা পাননি প্রায় ৫ শত মানুষ।
সিভিল সার্জন অফিসের কোভিড-১৯ কোয়ারেন্টাইন ও আইসোলেশনের দৈনিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে মৌলভীবাজার জেলার ১০১ জনের নমুনা পরীক্ষায় পাঠালে ১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৯ দশমিক ৯ শতাংশ।
গত কয়েকদিনের পরিসংখ্যনে দেখা গেছে ১২ সেপ্টেম্বর সনাক্ত হয়েছে ৪ দশমিক ৫ শতাংশে। ১১ সেপ্টেম্বর শনাক্তের ১০ দশমিক ৩ শতাংশ। এর আগের দিন ১০ সেপ্টেম্বর শুক্রবার শনাক্তের হার ছিলো ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। পাশপাশি করোনায় মৃত্যুও কমে এসেছে।
করোনায় মৌলভীবাজার জেলায় ৭২জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। যাদের মধ্যে রাজনগর ৪ জন, কুলাউড়া ২ জন, বড়লেখায় ৫ জন, কমলগঞ্জে ৫ জন, শ্রীমঙ্গলে ১১ জন, জুড়ী ৫ এবং সদর হাসপাতালের ৪০ জন রয়েছেন।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডাঃ ফয়ছল জামান জানান, গত ২৯ আগষ্টের পর অর্থাৎ গত ২ সপ্তাহে সদর হাসপাতালে করোনা ওয়ার্ডে করোনায় কারো মৃত্যু হয়নি।
মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতাল কেন্দ্রে টিকা নিতে আসা আনোয়ার মিয়া জানান, সকাল ১১ থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত লাইনে দাঁড়ান। পরে জানতে পারেন টিকা দেয়া শেষ হয়েছে। পরে তিনি টিকা না পেয়েই বাড়ি ফিরেন।

 

আমেনা বেগম নামের এক নারী জানান, আগের দিন লাইনে দাঁড়িয়ে টিকা দিতে পারেননি। পরের দিন সকাল ৬টার মধ্যে লাইনে দাঁড়ান ও দুপুরের দিকে প্রচন্ড গড়মের মধ্যে টিকা দিয়ে বাড়ি ফিরেন।
এমদাদ আলী জানান, টিকার রেজিষ্ট্রেশন কাগজ নিয়ে আসেন কিন্তু মোবাইলে এসএমএস না পওয়ায় টিকা দিতে পারেননি। তিনি গনটিকার প্রচার জেনে টিকার জন্য রেজিষ্ট্রেশন করেন, গন টিকার লাইনে দাঁড়িয়েও টিকা পাননি। তিনি আরও জানান একমাসের অধিক সময় হলেও তার মোবাইলে টিকা দেয়ার এসএমএস পাননি।
টিকা নিতে আসা আসমা বেগম জানান, সকাল ৯ টায় আমি টিকা দিতে আসি। টিকা নেওয়ার এসএমএস পেয়েই এসেছি আমি ও আমরা সাথের একজনকে নিয়ে। টিকা নেওয়ার জন্য মহিলাদের লাইনে দাঁড়াই। হাসপাতাল থেকে শুরু হয়ে বাইরের শ্রীমঙ্গল সড়ক পর্যন্ত পর্যন্ত লাইন ছিলো। এত রোদের মাঝে আমারা দূর্বল হয়ে পড়েছি। তারপরও চিন্তা করলাম টিকা দিয়ে দেই। টিকা নিতে আসা পুরুষদের লাইন আরও লম্বা ছিলো। অনুমান সাড়ে ১২টায় পুলিশ বাঁশি দিয় বলে টিকা শেষ হয়ে গেছে। এত রোদের মাঝে বাইরে দাঁড় করিয়ে টিকা পাইনি, তা হলে আর টিকাই নিবো না।
 জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ চৌধুরী জালাল উদ্দিন মুর্শেদ বলেন, টিকার ঘাটতি আছে। আমি গতকাল রোববার ১২ সেপ্টেম্বর রাজনগর থেকে ১ হাজার টিকা আনিয়েছি। গতকাল ৮০০ এসএমএস গিয়েছে টিকা নিতে আসার জন্য। যারা এসএমএস পেয়েছে তারা টিকা পাওয়ার কথা। সিভিল সার্জন আরও বলেন, ২-৩ দিনের মধ্যেই টিকা চলে আসবে। করোনার টিকা সর্ব শেষ চীনের সিনোফার্ম কোম্পানীর ৮৫ হাজার ডোজ টিকা গত ৫ সেপ্টেম্বর এসেছে। এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টিকা রেজিষ্ট্রেশনকারীরা অপেক্ষমান রয়েছেন। প্রতিদিন জেলার ৭টি কেন্দ্রে প্রায় ৪ হাজার টিকা দেয়া হচ্ছে। এসএমএস প্রাপ্তির পর টিকা দিতে আসার জন্য পরামর্শ দেন।
জেলা সিভিল কার্যালয় সূত্রে জানায়, গত ২৪ ঘন্টায় ১০১টি নমুনা পরীক্ষায় পাঠালে ১০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা অনুযায়ী শনাক্তের হার ৯. ৯ শতাংশ। এ পর্যন্ত জেলায় ৭,৯৬২ জনের শরিরে করোনা সনাক্ত হয়। সুস্থ হয়েছেন ৬,৭৩৫ জন। জেলার সরকারি হাসপাতালের করোনা ইউনিট ও আইসোলেশনে করোনা আক্রান্ত ও উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ২৪ জন। সরকারী হিসেবে করোনায় আক্রান্ত হয়ে জেলায় মৃত্যুবরণ করেন ৭২ জন। তবে করোনায় আক্রান্ত মৃত্যুবরণকারী পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি থেকে প্রাপ্ত তথ্যে বে-সরকাররি হিসেবে জেলার বাহিরে চিকিৎসা নিতে গিয়ে এ পর্যন্ত মোট করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৩৫ জন।

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন