অভিজ্ঞতা-দক্ষতায় চিন্তার পরিপক্কতা আসে

গুজবে ভেসে যারা হুজুগের পেছনে দৌড়ায় তাদের বয়স অনেক হতে পারে কিন্তু যে শিশু সত্য উদঘাটনের সূত্র তালাশ করে সে অধিক ম্যাচিউরড!

রাজু আহমেদ।  কলাম লেখক।  |

ম্যাচিউরিটির আংশিক বয়সের কারনে আসে তবে অধিকাংশ আনে বুদ্ধি-বিবেক। কারো গোপন কথা কাউকে না জানিয়ে নিজের মধ্যে হজম করতে পারার ক্ষমতাকেই ম্যাচিউরিটি বলে।  অসহায়-বিপন্নকে গোপনে সাহায্য করার যে বোধ সেটাকে ম্যাচিউরিটি মহোত্তম রূপ বলা যায়! কারো দূর্বলতায় আরও আঘাত দিয়ে সুখানুভব পাশবিকতা; বোধের পরিপক্বতা নয়।  ম্যাচিউরিটির সবচেয় শুদ্ধতম অংশ বিশ্বাস-ভরসার মধ্যে লুকিয়ে থাকে। কান কথা বিশ্বাসকারীদের দেহ বয়সের ভারে পোক্ত হতে পারে কিন্তু ম্যাচিউরিটির পর্দায় পরিপক্বতা আসেনি। নিজেকে বিলিয়ে বেড়ানোর মধ্যে, গোপনীয়তা উজাড় করার মধ্যে ম্যাচিউরিটি নাই; আঁতলামি থাকতে পারে!  

 

গুজবে ভেসে যারা হুজুগের পেছনে দৌড়ায় তাদের বয়স অনেক হতে পারে কিন্তু যে শিশু সত্য উদঘাটনের সূত্র তালাশ করে সে অধিক ম্যাচিউরড! যে সম্পর্কের গভীরতা নাই, অনুভূতি নাই, বিশ্বাস নাই, আস্থাহীন-সে সম্পর্ক যে বয়সের মানুষের মধ্যেই হোক সেটা অপরিপক্ক! অপরিপক্ক কিছু পাকার যোগ্য নয় বরং পঁচনশীল। যে মানুষ নিজেকে সামলাতে পারে, অন্যদের সাথে সুসম্পর্ক-সদ্ভাব রাখতে পারে, অন্যায়কে দৃঢ়ভাবে পরিত্যাগ করতে পারে, সাদাচোখে সত্যকে আবিস্কার করতে পারে তারচেয়ে ম্যাচিউরড আর কেউ নাই! অনেকসময় শিক্ষাও ম্যাচিউরিটি আনতে ব্যর্থ হয়, বয়স বিফল হয় তবে অভিজ্ঞতা-দক্ষতায় পরিপক্বতা আনে। 

 

ম্যচিউরিটির জন্য  যদি বয়সের অপেক্ষা করেন তবে একজীবনে সেটার দেখা নাও পেতে পারেন। যে শিশু বাবা-মায়ের দরদ বোঝে, যে মানুষ বন্ধুত্বের মর্যাদা রাখে, যে স্বামী/স্ত্রী বিপরীত জনের বিশ্বাস-ভরসা হয়ে থাকে, যে মানুষ সম্পর্কের গভীরতা না মেপে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে ভালোবেসে যায়, যে কর্মী তার ওপর অর্পিত কাজ সম্পূর্ণ করে, যে আমানত রক্ষা করে-এদের চেয়ে বেশি ম্যাচিউরড আর কেউ নাই। সমাজে যার যার অবস্থানে সে সে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ থাকলেই সেটা ম্যাচিউরিটির চূড়ান্ত পর্যায়। 

 

চাকুরি-চেয়ার-ক্ষমতা এগুলো ম্যাচিউরিটির মাপকাঠি না। মাপকাঠি হচ্ছে সততা-দায়িত্বশীলতা এবং জবাবদিহিতা। আমি কে সেটা কাজ সাক্ষ্য দিবে। নির্ভরশীল আমার বিশ্বস্থতায় প্রমাণিত হলে তবেই সেটাকে ম্যাচিউরিটির মুকুট পরানো যায়। পাকা পাকা কথার মধ্যে ধোঁকা থাকতে পারে, রূপের প্রলোভনের মধ্যে স্বার্থ থাকতে পারে কিন্তু গুণই হচ্ছে আকর্ষণ করার টনিক। বণিকদের কাছ থেকে ভালোবাসা কিনে সম্পর্ক টেকানো যায় না। যত্ন করে, অভিমান ভাঙিয়ে মানবীয় সম্বন্ধগুলোকে ম্যাচিউরড করতে হয়। যে পারে সে সাতেই পারে আর যার হয় না সে সত্তুরেও খাবি খায়! ম্যাচিউরিটি মনে আসে; দেহের আকৃতিতে না। ম্যাচিউরিটি কাজের মাধ্যমে আসে, উদাসীনতায় না। 

 

কারো অনুপস্থিতিতে তার সম্পর্কে নিন্দা করা, সুযোগ পেলে কারো ক্ষতি করন,  ইচ্ছা করে বিবাদ করার মধ্যে স্বভাবের পরিপক্কতা নাই। ছেলেমানুষী মন্দ নয় তবে সেটা সম্পর্কের ছন্দ কাটলে মন্দ তো টানবেই।  মুখে অশ্লীলতা রেখে, কাউকে ভীতি দেখিয়ে, উচ্চশব্দে ধমকে কাউকে দমিয়ে দেয়ার যে প্রবণতা সেটা চরমভাবে চিন্তা-আচরণের অপরিপক্বতা। সুযোগ পেয়ে সেটার অপব্যবহার করে, চিন্তা ও মননে কুরুচি ধারণ করে সাধু সাজা যায় কিন্তু সৎ হওয়া যায় না। মানুষের থেকে একফোঁটা ভালোবাসা পেতে হলে বিনিময়ে একফোঁটা ভালোবাসতে হবে! চিন্তা-চেতনায় মানুষ হলে ফানুস উড়িয়ে আগুন ধরাতে হয় বরং ভেতর থেকে আলোর উদগীরণ ঘটে! অযুক্তিকে যুক্তি বলে চালিয়ে দেয়ার যে প্রবণতা সেটা পরিত্যাগ করতে পারলে তবেই মানুষ হিসেবে পূর্ণ পরিক্কতার ধারক হবো। জীবন তখন মানবজীবনের রঙ ও রসে ধন্য হবে।  

 

 

মন্তব্যসমূহ (০)


ব্রেকিং নিউজ

লগইন করুন


Remember me Lost your password?

Don't have account. Register

Lost Password


মন্তব্য করতে নিবন্ধন করুন